‘রাস্তায় গাড়ীঘোড়া বিশেষ ছিলা না, পকেটে ট্যাক্সি করার মতো টাকাকড়িও ছিল না, তাই দেরী হয়ে গেল’। – এই বাক্যের মানে, বুঝতে আমাদের কোন অসুবিধে হয় না। কিন্তু দেখুন,এই বাক্যে অন্তত দুটি এমন শব্দ রয়েছে, যা নিরর্থক, যার অস্তিত্ব কার্য্যক্ষেরে নেই; কিন্তু আমাদের ভাষায়, আমাদের কথা বলার অভ্যাসের ভিতরে, শব্দ দুটি নির্ব্বিবাদে থেকে গেছে যেমন ‘কড়ি’ ও ‘ঘোড়া’। মাত্র দেড়শো বছর আগেও কড়ি ছাড়া আমাদের চলত না, আজকড়ি নেই; একালের বহু ছেলেমেয়ে জানেই না ‘কড়ি’ জিনিসটি দেখতে কেমন;অথচ আমাদের ভাষাতে তার অস্তিত্ব আজও বহাল। কথাবার্ত্তায় ‘টাকাকড়ি’ শব্দটি এখনও প্রায় সব বাঙালীই ব্যবহার করে থাকেন। ওদিকে, ১৯০০ সালের কলিকাতায় বাঙালীর প্রধান বাহন ছিল ঘোড়া; ছিল ঘোড়াগাড়ী, জুড়িগাড়ী।আজ তা সেভাবে নেই বললেই চলে। অথচ কথায় কথায় আজও আমরা বলি, ‘গাড়ীঘোড়া’ ছিল না, তাই দেরী হয়ে গেল’।
আসলে, মানুষ যে যে যুগের ভিতর দিয়ে চলতে চলতে বর্ত্তমানে এসে পৌঁছায়, সেই সেই যুগের বহু কিছু বিলুপ্ত হয়ে গেলেও সেগুলির চিহ্ন কিন্তু এভাবেই তার ভাষায় থেকে যায়। চাইলে, অতীতের চিহ্নবাহী এ’রকম অজস্র শব্দ সংগ্রহ করে তালিকা বানিয়ে যে-কেউ তা দেখিয়ে দিতে পারেন।
অপরিমিত টাকার মালিককে আমরা বলি ‘লোকটা টাকার কুমীর’, অথবা‘লোকটা ঘোড়েল’ লোক’। [ ঘোড়েল হল ঘড়িয়াল, এক জাতের ছোট কুমীর]। কিংবা বলা হয়, ‘ও হল রাঘব বোয়াল’। শুধু তাই নয়, ধনী মানুষদের উল্লেখ করতে গিয়ে এমনও বলা হয় – যাঁরা সামনে দাঁড়িয়ে ফটর ফটর করছে, ওরা তো চুনোপুঁটি, যারা গভীর জলের মাছ, রুইকাৎলা, তারা কিন্তু চুপচাপ’! আর, জ্যেষ্ঠ-ধনী যখন কনিষ্ঠ -ধনীকে গ্রাস করে ফেলে, আমরা বলি, ‘বড় মাছ ছোট মাছকে এভাবেই খায়, এটাই তো মাৎস্যন্যায়’! আবার, এক ব্যক্তিমালিক যখন অন্য-ব্যক্তিমালিকের ধনসম্পত্তি দেখে সইতে পারে না, হিংসা-দ্বেষ বা ঈর্ষা করে, আমরা বলি, এটাই ‘মাৎসর্য্য’। ‘এই মাৎসর্য্য’ ভাল নয়’। ‘সংসারের পাঁকে থাকলেও পাঁকাল মাছের মতো গায়ে পাঁক লাগতে দিয়ো না’ – বলতেন আমাদের পিতৃ-পিতামহেরা।
কৌতূহল হতে পারে – সত্যিই তো! আমাদের ভাষায়, ধনসম্পদের মালিকদের শনাক্ত করতে এভাবে জলজ প্রাণিদের উল্লেখ করা হয় কেন?
ব্যক্তিমালিক-মানুষের সঙ্গে জলজ প্রাণীদের কি কোন সম্পর্ক ছিল?
সে সম্পর্কের কথা কি আমরা ভুলে গেছি? অথচ দেখা যাচ্ছে, আমাদের ভাষায় এখনও তার অজস্র ছায়া থেকে গেছে। সবচেয়ে বড় কথা, আমাদের ভাষায় উপরোক্ত শব্দগুলির প্রচলন থেকে বোঝা যায়, ধনসঞ্চয় বিষয়ে আমাদের প্রাচীন পূর্ব্বপুরুষদের বেশ একটি বিরাগমূলক ধারণা ছিল; এবং সেরকম বিবাগ না থাকলে ওই শব্দগুলি ব্যবহারও করা যায় না। তাহলে কি, ধনসম্পত্তি বিষয়ে আমাদের পূর্ব্বপুরুষেরা কোনো কারণে ঐরূপ বিরাগমূলক ধারণা অর্জ্জন করেছিলেন? ধনসম্পত্তির প্রতি সেই বিরাগ উত্তরাধিকার সূত্রে আমরা আজও কি বহন করে নিয়ে চলছি? …
— —-
——-
ওপরের লেখাটি কলিম খান এবং রবি চক্রবর্তীর অবিকল্পের সন্ধানে গ্রন্থটির প্রথমপাতা থেকে নেওয়া
কৃত্তিবাসের রামায়ণ, কাশীরামের মহাভারত, মঙ্গলকাব্য, চৈতন্যের দর্শণ, হিন্দুমুসলিম পদকর্তাদের বিশাল পদাবলী সাহিত্য, কবিগান কথকতা নামসংকীর্তন মুর্শিদা ফকিরি জারি আলকাপ পটুয়ার গান …ভবাপাগলা লালনফকির হাসানরাজা রামপ্রসাদের গানের ধারা ভারতচন্দ্র, আলাওল,সৈয়দ সুলতা্ন, ফয়জুল্লহ্-রাদের চর্চার মধ্যে বাংলাভাষার যে ধারা বয়ে এসেছে… যার খবর রাখতেন রবীন্দ্রনাথ, হরিচরণ, নজরুল, সৈয়দ মুজতবা আলীরা … যে ধারা এখনও ক্ষীণ ভাবে বয়ে চলেছে গ্রামবাংলায়, মেয়েদের ভাষায় আচারে-সংস্কারে ,তথাকথিত ‘মূর্খ বাঙালি’র বয়ানে… তা নিয়ে কাজ করতে করতে কলিম খান এবং রবি চক্রবর্ত্তী ভাষা তত্ত্বের এক অসাধারণ আবিষ্কার, আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন।
এই পথে মানুষের ইতিহাস,সমাজ,অর্থনীতি ইত্যাদির স্বরূপ বুঝতে, সনাতন জ্ঞানধারা স্রোতে অবগাহনের জন্য যোগাযোগ করতে পারেন – বঙ্গযানে
বঙ্গযান – ফেসবুকের পাতা
এই ফেসবুক পাতা কলিম খান-রবি চক্রবর্ত্তী উদ্ভাবিত বর্ণভিত্তিক-ক্রিয়াভিত্তিকি শব্দার্থবিধি (বাংলা সেম্যাণ্টিক্স) চর্চ্চার একমাত্র স্বীকৃত আন্তর্জ্জালিক মাধ্যম।
শব্দার্থবিধির আলোয় আলোকিত আর বহু মানুষের প্রতিবেদন নিবন্ধ পাঠেরও অন্যতম মাধ্যম এই ‘বঙ্গযান’।
এই নতুন আলোয় বাংলাভাষার পুরাণ-বিষয়ক ইতিহাসের পুনরুদ্ধার ও গবেষণার জন্য ‘পাঠশালা’র ব্যবস্থা হয়েছে। আগ্রহীরা, বঙ্গযানে নাম নথিভুক্ত করতে পারেন।
বই সংগ্রহ বা অন্য যে কোন বিষয়ের জন্য ‘বঙ্গযানে’ অথবা ফোনে যোগাযোগ করুন (৯১) ৯৪৩৩১৮৯৪৪১ (৯১) ৭৯৮০৭৯৭২৮৫
বইয়ের তালিকা- যৌথভাবে কলিম খান ও রবি চক্রবর্ত্তী
বাংলাভাষা প্রাচ্যের সম্পদ ও রবীন্দ্রনাথ
অবিকল্পসন্ধান বাংলা থেকে বিশ্বে
বঙ্গীয় শব্দার্থকোষ – দুটি খণ্ড
সুন্দর হে সুন্দর
বঙ্গযান
সরল শব্দার্থকোষ
বাংলা বাঁচলে সভ্যতা বাঁচবে
বঙ্গতীর্থে মুক্তিস্নান বাংলাভাষা থেকে সভ্যতার ভবিতব্যে
এককভাবে রবি চক্রবর্ত্তীর গ্রন্থতালিকা –
India Rediscovered
দিগন্তের টানে The Lure of the Horizon
এককভাবে কলিম খানের গ্রন্থতালিকা –
মৌলবিবাদ থেকে নিখিলের দর্শনে
দিশা থেকে বিদিশায় নতুন সহস্রাব্দের প্রবেশবার্ত্তা
ফ্রম এনলাইটেনমেণ্ট টু ইমোশনাল বণ্ডেজ জ্যোতি থেকে মমতায়
আত্মহত্যা থেকে গণহত্যা আসমানদারী করতে দেব কাকে
পরমাভাষার বোধন-উদ্বোধন ভাষাবিজ্ঞানের ক্রিয়াভিত্তিক রি-ইঞ্জিনীয়ারিং
বঙ্গযানের লিঙ্ক